একীভূত দুর্বল ব্যাংকের এমডি ডিএমডি চাকরি হারাবেন

Passenger Voice    |    ০৩:৪১ পিএম, ২০২৪-০৪-০৫


একীভূত দুর্বল ব্যাংকের এমডি ডিএমডি চাকরি হারাবেন

একীভূত হওয়া দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) চাকরি হারাবেন। এ ছাড়া একীভূত হওয়া দুই ব্যাংকের মধ্যে খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকের পরিচালক পরবর্তী ৫ বছর অন্য কোনো ব্যাংকে পরিচালক হতে পারবেন না।

এ রকম বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংক একীভূতকরণ নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে চারটি সংযুক্তি দেয়া হয়েছে।

নীতিমালার আলোকে খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলো নিজ থেকে একীভূত না হলে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূতকরণ করা হবে। একীভূতকরণের আগে দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা সই করতে হবে। এরপর বিস্তারিত পরিকল্পনা বিশেষ করে আমানতকারী, সকল পাওনাদার ও বিনিয়োগকারীর অর্থ ফেরতের পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক চিত্র বের করবে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে সর্বশেষ আদালতের কাছে একীভূতকরণের আবেদন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যেসব ব্যাংক নিজ থেকে একীভূত হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন নীতিসহায়তা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে সিআরআর, এসএলআর সংরক্ষণে ছাড় দেয়া হতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, সাধারণভাবে একটি ব্যাংকের ৪ শতাংশ হারে নগদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হয়। এখন ৫০ হাজার কোটি টাকার একটি ব্যাংকের হয়তো ১ শতাংশ সিআরআর ছাড় দেওয়া হলো। এতে ওই ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা ছাড় পেল। এ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে ব্যাংকটি ভালো করতে পারবে।

এদিকে নীতিমালা জারির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন এবং মধ্যস্থতায় একটি ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষমতার আলোকে গত ৫ ডিসেম্বর পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক শীর্ষক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক মূলধন ও তারল্য ঘাটতি, উচ্চ মাত্রার খেলাপি ঋণ, সুশাসনের ঘাটতি এবং সর্বোপরি আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপের কারণে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্কের আওতাভুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পুনরুদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধ মানতে হবে। পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হলে আমানতকারীদের স্বার্থে ব্যাংকের বাধ্যতামূলক একীভূতকরণ করা হবে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শৃঙ্খল এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্যে ব্যাংকের অনুসরণের এই নীতিমালা জারি করা হলো।

জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, একীভূত হওয়ার পর আমানতের অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীর অর্থ পরিশোধ বা তাদের হিসাব ও ব্যাংকিং লেনদেন সচল করার বিষয়টিকে সাধারণভাবে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধের উদ্দেশ্যে একটি পরিশোধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক তা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক ওই কর্মপরিকল্পনা পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ বা পরিবর্তন ব্যতীত অনুমোদন প্রদান করবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, দুর্বল ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩ বছরের মধ্যে ছাঁটাই করা যাবে না। তবে ৩ বছর পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। একীভূত হওয়ার পর দুর্বল ব্যাংকের পরিচালক তার পদ হারাবেন। এমনকি ৫ বছরের মধ্যে তিনি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। বিলুপ্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে একীভূত ব্যাংকের কোনো পদে রাখা যাবে না। তবে একীভূত ব্যাংকের পর্ষদ বিলুপ্তির পর এমডি, এএমডি ও ডিএমডিকে উপযুক্ত মনে করলে নতুন করে চুক্তির ভিত্তিতে কোনো পদে নিয়োগ করা যাবে। এছাড়া সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি, এএমডি ও ডিএমডিকে সরকার তার অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সমপদে বহাল বা বদলি করতে পারবে। একীভূত হওয়ার পর বিলুপ্ত ব্যাংকের ঋণ যাতে খেলাপি না হয়ে যায় এবং ঋণগুলোর তদারকি ও খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য পৃথক ইউনিট গঠন করতে হবে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠিত হওয়ার পর ঋণ বা বিনিয়োগের বিপরীতে গৃহীত সহায়ক জামানতসহ উক্ত খেলাপি ঋণ বা বিনিয়োগ বিক্রি করা যাবে।

একীভূতকরণের পদ্ধতি: দুই বা তার অধিক ব্যাংক বা ক্ষেত্রমতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি একীভূত হওয়ার বিষয়ে ঐক্যমত হয় তবে ওই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ পর্ষদে বিষয়টি উপস্থাপন করে নীতিগত অনুমোদন গ্রহণ করবে। এরপর তারা বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো তালিকাভুক্ত হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশনের কাছে থেকে অনুমোদন নিবে। এরপর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক এবং হস্তান্তরকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার বা যে অংশ অধিগ্রহণ করা হবে তার নিরীক্ষা, আর্থিক এবং আইনি কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক তার তালিকাভুক্ত নিরীক্ষা ফার্ম হতে এক বা একাধিক নিরীক্ষা ফার্মকে নিয়োগ প্রদান করবে। এক্ষেত্রে ওই নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কাজ সম্পন্ন করার খরচ বহন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারী, পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারগণের দাবি পরিশোধসহ সম্পূর্ণ একত্রীকরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা ফার্ম তার নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কার্যক্রম প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট দাখিল করবে। এসব বিষয় সম্পাদন কালে তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রদত্ত অনুমোদন বাতিলও করতে পারবে।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংক কাছে জমা হলে ওই প্রতিবেদন গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানির নিকট প্রেরণ করা হবে। এরপর তারা নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করে অনুমোদন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এরপর শেয়ারহোল্ডার বা পাওনাদারদের সম্মতির জন্য বিশেষ সভা আহ্বান করে বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে পাওনাদার বা শেয়ারহোল্ডার অথবা সদস্যগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের সম্মতি গ্রহণ করতে হবে। একত্রীকরণ-সংক্রান্ত স্কিম বিশেষ সাধারণ সভায় অনুমোদনের পর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতির জন্য আবেদন করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্তুষ্টির পর এটি কার্যকর করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের নিকট অনুমোদনের জন্য আবেদন দাখিল করবে। হাইকোর্ট অনুমোদনের বিষয়ে অনাপত্তি দিলে হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানি জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রারের নিকট নিবন্ধন করার জন্য হাইকোর্টের আদেশের কপি দাখিল করবে। সে অনুযায়ী, স্কিমটি বাস্তবায়নের জন্য শেয়ারহোল্ডারগণ ও অন্যান্য অংশীদারগণের অবগতির জন্য নোটিশ প্রদানপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং স্কিমের একটি কপি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নিকট পাঠানো হবে। এসব বিধান অনুসরণ করে দুটি প্রতিষ্ঠান একীভূত হবে।

প্যা.ভ/ত